শেষ কান্না




আজ দীর্ঘ ছয় বছর পর ফেসবুকে লগ ইন করতেছে রাজ।
কি আজব দুনিয়ায় ছিল এত দিন,
এই ছয়টা বছর সবার চেয়ে দুরে ছিল,,
বাবা, মা,ভাইয়া,,,আপু,,আর নিজের
অনেক অনেক ক্লোজ বন্ধুদের থেকেও দুরে।
আচ্ছা দুনিয়ার এরা সবাই কি ভেবে নিয়েছে?
ওরা হয়ত ভেবে নিয়েছে রাজ
আর পৃথিবী তে নাই।
বাবা মা,তারাও কি এটাই ভেবে নিয়েছে
আমি আর বেচে নেই?
রাজ বসে বসে ভাবতেছিল এসব।
সেই অন্ধকার জায়গায় তো কারো
সাথে যোগাযোগ করার মত উপায় নেই।
সবার থেকে দুরে ছিল।
অবশ্য কোন পাপের জন্য এসব হলো আজো
বুঝতে পারলো না।
সেখান থেকে এসেই জীবনের প্রথম
একটা খারাপ কাজ করতে হলো ৷ রাজকে
একটা মোবাইল চুরি করতে হলো,
এটা একটা মেয়ের মোবাইল।

জীবনের গল্প

বাস থেকে সে চুরি করেছে।
যদিও ভাড়া দিতে না পারায় বাস থেকেও পড়ে নামিয়ে দেয় পাগল বলে।
আচ্ছা ওর যে চেহারা এখন তাতে কেউ তো ওকে ভালো বলতে পারবে না।
সবাই পাগল ই ভাববে,,,,,,,,,,,,বাস থেকে নেমে একটা জায়গায় বসেই মোবাইল টা বের করেই
ফেসবুকে লগইন করলো,,,,,,,,মেয়েটার আইডি লগ ইন করা, ,,
লগ আউট করেই নিজের আইডিতে গেল,
বাট পাসোয়াড় সেভ করলো না,,
কারন মেয়ের টা সেভ করা ছিল।
মোবাইল টা তো ফিরত দিতে হবে একদিন
সীম চেঞ্জ করলেও যাতে ফেসবুক দিয়ে ফিরিয়ে দেয়া যায় তার জন্য এই ব্যবস্থা, , , ,,, ,,,
ছয় বছরে ফেসবুক টা অনেক চেঞ্জ হয়ে গেছে।জীবন টাই কত চেঞ্জ হয়ে গেছে আর এটা তো
ফেসবুক।
চেঞ্জ তো হবেই।
ফেসবুক এ নোটিফিকেশন বার এ ৯৯ টা নোটিফিকেশন এর বেশি থাকে না ৷
এখন হয়ত না।
ম্যাসেজ ৩২৯ জনের জনের।
আচ্ছা ম্যাসেজ গুলা একটু দেখা উচিত,,,,,,,,
প্রথম ম্যাসেজ টা স্নিগ্ধার,
মাত্র দুই দিন আগের।
এত দিনেও ভুলে নি আমায় মেয়েটা?
ভাবতেই অনেকটা অবাক হয়ে যায় রাজ।
তার পরেই ফ্রেন্ড দের ম্যাসেজ,
কয়েকটা এক বছর আগের,কয়েক
জনের দুই বছর আগের, আবার কয়েকটা
তিন চার বছর আগের ম্যাসেজ।
কি বেপার ভাইয়াও আমাকে ম্যাসেজ দিয়েছিল?
যে ভাইয়া কোন দিন আমায় ফোন দিত না,,,
আমার নাম শুনলেই রেগে যেত সেই ভাইয়াও আমার খোজ করেছে??????
খুব অবাক হয়ে যায় রাজ ৷৷
স্নিগ্ধা মেয়েটার লাস্ট ম্যাসেজ ৷৷৷
,"''দুই দিন পর তোমার বলা দশ বছর পুর্ন হবে,
আমার সেদিন ই বিয়ে করতে হবে,আমি আর পরিবার কে আটকাতে পারলাম না""""
কি পাগলী মেয়ে ছিল একটা,,
এত দিন কেউ কারো জন্য ওপেক্ষা করে নাকি??? মেয়েটা তার কথা রেখেছে,কিন্তু রাজ তার কথা রাখতে পারে নি হয়তো ৷
কি আর করার ছিল তার?
সে ত অন্য দুনিয়ার বাসিন্দা হয়ে বেচে ছিল।
এর পরে আরো অনেক গুলা ম্যাসেজ
ছিল স্নিগ্ধার দেওয়া,,,
ম্যাসেজ গুলা এই রকম ছিল
"তুমি কোথায় চলে গেলে রাজ?"
"তোমার জন্য আমি আমার দেয়া কথা মত দশ বছর অপেক্ষা করবো"
"তোমায় প্রতিদিন রাতে Love you
বলে আদর করে না দিলে ঘুমাতে না,
আমি প্রথম দুই বছর তোমায় প্রতিদিন রাতে
Love you বলে আদর করে দিতাম,,
এখন আর বলতে পারছি না """
কি পাগলী মেয়ে রে,,,,
প্রতিরাতে আমায় মিস করে,,,
আরো এমন অনেক ম্যাসেজ আছে স্নিগ্ধার দেয়া,,
সব পড়া সম্ভব হয় নি রাজের।
তার পরে ম্যাসেজ টা ফ্রেন্ড এর ৷
ম্যাসেজ টা পড়ে কান্নায় দুচোখ ভিজে গেল,,,,,,
"দোস্ত আন্টি মারা গেল,তাও তুই আসলি না,
এতটাই নিষ্ঠুর তুই?"
রাজ তার আম্মুকেও শেষ দেখা দেখতে পারেনি।
কি ভাগ্যবান ছেলে,,,
যে ছেলে মা কে ছাড়া কিছুই বুঝতো না,
বাসায় সব সময় মায়ের পিছনে পিছনে ঘুরতো,,,,
মা খাওয়াইয়া না দিলে খেত না,
সেই মা আজ নেই,,,
মাকে দেখতেও পারেনি শেষ বারের মত।
ম্যাসেজ টা প্রায় দুই বছর আগের,
তার মানে রাজের মা দুই বছর আগে মারা গিয়েছে,,,,
রায়হানের আরো কিছু ম্যাসেজ আছে,,,
ওই গুলা খুব সাধারন ম্যাসেজ,,,
বন্ধু হারিয়ে যাওয়ার পর
সাধারনত যেসব বলা হয় তেমন ই।।
এর পর অনেক জনের ম্যাসেজ,,,
সব গুলাই রাজকে কে মিস করতেছে এমন ম্যাসেজ ই।।
আরেকজন এর ম্যাসেজ দেখে রাজ
থমকে দাঁড়াল,,,
হুম,এই মেয়েটা রাজের একমাত্র আপু,,,
আপু ও অনেক গুলা ম্যাসেজ দিয়েছে কয়েক টা ম্যাসেজ পড়ে দেখেছে রাজ ৷৷৷৷
"ভাইয়া তুই কোথায় হারিয়ে গেলি?"
"আজ আমার বিয়ে তুই আসবি না ভাইয়া?"
"ভাইয়া,আজ তর ভাগ্নী প্রথম মামা ডেকেছে,
তুই শুনবি না ভাইয়া"
আপূটাকে অনেক ভালোবাসতো রাজ,,,
অনেক স্বপ্ন ছিল,আপুর বিয়েতে মজা করবে,,আপুর বেবিকে নিয়ে ঘুরবে,,,
রাজের মামা ডাক শুনার প্রচন্ড ইচ্ছা ছিল,,
কিন্তু কি কপাল দেখো,বোনের বিয়েটাও দেখতে পারে নি।।।
সবার ম্যাসেজ দেখার মত মানসিক
অবস্থায় ছিল না তার তাই ফেসবুক থেকে লগ আউট করলো।ইচ্ছে করলো মেয়েটার আইডিতে লগ ইন করতে,,,তাই করলো,,,
কি হয়েছে মেয়েটার?
এমন স্ট্যাটাস দিয়েছে কেন?
"চলে যাচ্ছি অজানা পথে,যেখান থেকে আর ফিরা যায় না,ভালো থেকো তুমি"
এর মানে কি?
মেয়েটা কোথায় যাচ্ছে?
আরেকটু ভালো ভাবে সব চেক করে বুঝতে পারলো সে সুইসাইড করতে যাচ্ছে, ,,,,
কিন্তু কেন?
মেয়েটাকে আটকাতেই হবে,,,,,যে কোন ভাবেই,,,,, কিন্তু মেয়েটাকে পাবে কোথাই এখন?
রাজ মেয়েটার চেহারা ঠিক মনে করতে পারছিল না,
তাই সে মোবাইল এর গ্যালারী চেক করতে লাগলো।মেয়ে টার অনেক গুলা পিক,,
হঠাত একটা ছেলের ইমেজ,,,
ছেলেটাকে দেখে অবাক হয়ে গেল,
ছেলেটা রাজের ভাইয়া,,,,,,,,
এই মেয়ের মোবাইল এ ভাইয়ার পিক কেন?
ভাইয়ার সাথে এই মেয়ের কিসের পরিচয় এসব নিয়ে রাজ ভাবতে লাগলো।
এমন সময় পাশ দিয়ে হঠাত পরিচিত কাউকে বাইক দিয়ে যেতে দেখলো মনে হচ্ছে,,,
হ্যা এটা তো রায়হান ।
একমাত্র বেস্ট ফ্রেন্ড রাজের,,,
অনেক জোরে ডাক দেয়ার ফলে রায়হান শুনতে পেল,
কিন্তু চিনতে পারলো না ঠিক মত,,,
এত বছর পর না চেনার ই কথা,,,
বাইক থেকে নেমে জড়িয়ে ধরে কান্না শুরু করে দিল রায়হান,এখন চিনতে পেরেছে,এত দিন পরে নিজের বন্ধুকে ফিরে পেয়ে আর সামলাতে পারছিল না।
রায়হান রাজকে বললো আজ রাতেই স্নিগ্ধার বিয়ে,,,,রাজ ভাবতেছে সময় মাত্র কয়েক ঘন্টা বাকি রয়েছে,কি করবে এখন সে?
স্নিগ্ধার কাছে যাবে?
নাকি মেয়েটাকে সুইসাইড এর হাত থেকে বাঁচাতে যাবে?
আর হ্যা মেয়েটার মোবাইল এ ভাইয়ার পিক কেন?
সবার আগে মেয়েটাকে বাঁচানো উচিত,,,
তাই রায়হান এর সাথে তেমন কথা না বলে ওকে জাস্ট বাইক এর চাবিটা দিতে বললো,,,
আর বলবো ওর কথা যেন কাউকে কিছু না বলে,,,রাতে দেখা করে সব বলবে।
এসব বলেই সে বাইক দিয়ে যেদিকে বাসটা গেছে সেদিকে যেতে লাগলো,,,রাস্তায় ভাবতেছে উপরের প্রশ্ন গুলা,,,,,আপাদত মেয়েটাকে বাঁচানোই উত্তম,,,,,, কিছু ক্ষন যাওয়ার পর বাস স্ট্যান্ড দেখতে পেলো,তার মানে এখানেই মেয়েটা নেমে গেছে,,,,কিন্তু কোথায় খুজবে মেয়েটাকে?
একটু এগিয়ে পাশে তাকাতেই একটা রেল লাইন দেখতে পেল,,,
সুইসাইড করার জন্য রেল লাইন ই বেস্ট,,,,,,
তাই মেয়েটাকে এখানেই পাওয়া যেতে পারে ,,,
হুম,,,পাওয়া গেছে,,ট্রেন এর জন্য মেয়েটা দাড়িয়ে আছে,,কখন ট্রেন আসবে, ,আর সে সুইসাইড করতে পারবে,,,,,রাজ মেয়েটার দিকে এগিয়ে যেতে লাগলো,,,,............
রাজ মেয়েটার পাশে গিয়ে বসলো।
মেয়েটা অন্য মনষ্ক হয়ে বসে আছে,,,
-আপনি সুইসাইড করবেন আজ?
-আপনাকে কে বললো এসব?
-আমি জানি তো সব ই।
-কিভাবে জানেন?
--দেখেন তো আপনার মোবাইল কোথায় ?
--এক চোরে চুরি করে নিয়ে গেছে।
--আমিই সেই চোর
--হোয়াট?
--আচ্ছা বলেন আপনি সুইসাইড করতে যাবেন কেন?
--আমি যাকে ভালোবাসি আজ তার বিয়ে,অন্য একটা মেয়ের সাথে।
--ও কি আপনাকে ভালোবাসে?
-জানি না,,,ও অন্য একটা মেয়েকে ভালোবাসে।
মোবাইল এর গ্যালারি থেকে ভাইয়ার পিক টা দেখালো রাজ,বললো এই ছেলে কে?
--আমি ওকেই ভালোবাসি ,ওরই আজ বিয়ে,,,
কি থেকে কি হয়ে যাচ্ছে,কিচ্ছুই বুঝতে পারছে না,,,অনেক গুলা সমীকরন নিজে মিলাতে চেস্টা করতে লাগলো।কিন্তু মিলাতে পারছিল না রাজ।
-আপনি যদি সুইসাইড করেন তাহলে, ওই ছেলেটার কি হবে?
--ওর কিচ্ছুই হবে না।
-তাহলে কেন করবেন?
-ওকে ছাড়া আমি বাঁচতে পারবো না,,,
--আর আপনার বাবা মা বন্ধু বান্ধব আপনাকে ছাড়া কিভাবে বাঁচবে?
--জানি না আমি।
--শুনেন আপনার বাবা মা আপনাকে অনেক ভালোবাসে,অনেক কস্ট করে আপনাকে বড় করে তুলেছে, ,,তাই তাদের কস্ট দেয়ার কোন অধিকার নেই আপনার।
--এক জন চোরের মুখে আমি জ্ঞান বাক্য শুনতে চাচ্ছি না,,,
--ওকে,আমার যা বলার তা বলেছি,এখনো যদি আপনি সুইসাইড করতে চান তাহলে করেন,এই নেন আপনার মোবাইল।
রাজ এই বলে চলে আসলো।।
রাজ বুঝতে পেরেছে,এখন আর বুঝিয়ে কোন কাজ নেই ।মেয়েটাকে সব বুঝানো হয়েছে,এখন আর সে সুইসাইড করতে যাবে না।।।
মেয়েটা পিছন থেকে রাজকে ডাক দিল,আর দাঁড়াতে বললো।....
-আপনি কে? আপনাকে দেখে ত চোর মনে হচ্ছে না,
--আমি চোর না,কিন্তু খুব প্রয়োজন এ পড়ে আজ জীবনের প্রথম মোবাইল টা চুরি করেছিলাম।সরি।
-কেন করেছিলেন?
-পরিবারের সাথে যোগাযোগ করার জন্য।
--এত দিন কিভাবে যোগাযোগ করতেন?
--করি নি যোগাযোগ।অনেক বছর পর যোগাযোগ করতে চেস্টা করেছিলাম আজ।
--কোথায় ছিলেন আপনি?
--সময় হলে জানতে পারবেন,, ।চলেন আপনার সেই ফ্রেন্ডের বিয়েতে যাই।
--কেন যাব?
--এমনি যাবেন মজা করতে,,,,,
--না যাব না,
--আচ্ছা আপনার বন্ধুর বিয়ে তে আপনি যাবেন না?এটা হতে পারে না,
--চলেন যাই,,,,
আজকে তো স্নিগ্ধার ও বিয়ে,ভাইয়ার ও বিয়ে, তাহলে কোন বিয়েটায় সবার আগে যাবে?
দুইটাতেই ত যাওয়া উচিত ।
রাজ ভাবতে লাগলো।
তাই রাজ মেয়েটাকে সাথে নিয়ে প্রথমে রায়হানের সাথে কথা বলতে গেল।তারপর দেখা যাবে কোনটায় আগে যাবে।
দরকার হলে ভাইয়ার বিয়েতে পরে গিয়ে আগে স্নিগ্ধার বিয়েতে যাবে,মেয়েটাকে ভাইয়ার বিয়েতে পাঠিয়ে দিয়ে।
আচ্ছা স্নিগ্ধার বিয়েতে যাওয়া কি ঠিক হবে রাজের??
আজকে ত বিয়েই হয়ে যাবে স্নিগ্ধার ,,
তাহলে শুধু শুধু গিয়ে মেয়েটার কস্ট বাড়ানোর কি প্রয়োজন???স্নিগ্ধার কাছে হারিয়ে গেছে এমন থাকাটাই মনে হয় ভালো হবে।আজ থেকে স্নিগ্ধার নতুন জীবন শুরু হবে,রাজ যদি ওর সাথে দেখা করে তাহলে হয়ত একটু ঝামেলাই হয়ে যাবে।
রাজের জীবনটা তো নস্ট হয়ে গেছে।
নিজের ক্যারিয়ার বলতে কিচ্ছু নেই।
তাহলে স্নিগ্ধাকে ওর জীবনে টেনে আনলে কস্ট ছাড়া আর কিচ্ছু দিতে পারবে না।
তাই স্নিগ্ধার সাথে দেখা না করাই ভালো হবে মেবি।বরং সব অতীত ভুলে আগে বাসায়
যাওয়াই ভালো হবে মনে হচ্ছে, ........
দুজনেই রায়হানের বাসায় আসলো।
রায়হান এর সাথে আরো কয়েকজন বন্ধু ওদের,,
রাজের কথা শুনে সবাই দেখা করতে এসেছে ওর সাথে।
কিন্তু সবাই এত বিষন্ন কেন?
রায়হান রাজের সাথে মেয়েটিকে দেখে চিনে ফেললো।মেয়েটিও রায়হানকে চিনে ফেলছে,,,এটা দেখে আরো অবাক হলো সবাই।
রাজকে দেখিয়ে রায়হান বলবো ওকে চিনেন আপনি?
মেয়েটি বললো"না তো,রাস্তায় পরিচিত"
এর পর রাজ নিজেই মেয়েটিকে বললো ,,
আমি হচ্ছি আপনার ভালোবাসার মানুষটার হারিয়ে যাওয়া ছোট ভাই,,,,,
মেয়েটি এবার খুব অবাক হয়ে গেল।এই ছেলেটাই সেই রাজ,??
রাজের দিকে অবাক হয়ে তাকিয়ে রইলো।এর মানে কি?
মেয়েটা কি রাজের সম্পর্কে কিছু জানে?
মেয়েটি হয়ত রাজকে নিয়ে এমন কিছু জানে যেটা রাজ নিজেও জানে না।কি এমন কিছু জানে মেয়েটা যার জন্য এমন অবাক হয়ে গেল?
বিষ্ময়ে তাকিয়ে রইলো..
....
ধীরে ধীরে সমস্ত বেপার রাজের কাছে পরিষ্কার হয়ে গেল।অনেক হাসি পাচ্ছে তার,,,,ভাইয়া এমন নাটক না করলেও পারতো।ভাইয়া স্নিগ্ধাকে ভালোবাসে?
কিভাবে এটা সম্ভব হলো?
আর স্নিগ্ধাও ভাইয়াকে বিয়ে করে নিচ্ছে?
হয়ত জীবনটা এমন ই।।।জীবনের চরম সত্যের মুখোমুখি দাড়িয়ে আছে রাজ ৷।
মেয়েটি রাজকে তখন ই সব খুলে বলেছিল।
ভাইয়া যে স্নিগ্ধাকে ভালোবাসে সেটা রাজ আগে জানতো না,,,,,,,,,,,
স্নিগ্ধাকে ভাইয়া একদিন রাস্তায় দেখেছিল।
দেখেই তার অনেক ভালো লেগে যায়,,,,,
পরে খোজ নিয়ে দেখে মেয়েটার একটা বিএফ আছে,,,,কিন্তু সেটার কথা না ভেবে নিজের ভালোবাসা কে বড় করে দেখতে থাকে।ভাইয়ার আগে থেকেই একটা অভ্যাস ছিল, যদি কিছু ভালো লেগে যায় তবে সেটা যে কোন মুল্যেই হোক না কেন সেটা অর্জন করে নিবেই।
স্নিগ্ধার বিএফ কে খুজতে গিয়ে দেখতে পারে ছেলেটা রাজ।
কিন্তু তাতে কি?
নিজের ভালোবাসা পাওয়ার জন্য রাজকেও দুরে সরাতে একটু ভাবতে হয় নি তার।
রাজ ভাবতেছে এজন্যই হয়ত ভাইয়া ওকে তার এক ফ্রেন্ড এর বাসায় পাঠিয়েছিল ,একটি ব্যাগ আনার জন্য।ব্যাগ নিয়ে যখন রাজ আসতেছিল তখন পুলিশ এসে ব্যাগ চেক করে,আর তাতে হিরোইন আর ইয়াবা পায়।পুলিশ তাকে ধরে নিয়ে যায়।বাবা মার মান সম্মান নস্ট হবে এই ভেবে রাজ তার পরিবারের কাউকে জানাতে দেয় নি।হয়ত ভাইয়া প্ল্যান করেই রাজকে স্নিগ্ধার থেকে দুরে সরানোর জন্য এই কাজটা করেছিলো।
-চলো রাজ-(মেয়েটি বললো)।
আজকে এই বিয়ে হতে দেয়া যাবে না,তোমার স্নিগ্ধাকে তোমার কাছেই ফিরিয়ে দিব ,।রাজের বন্ধুরাও এই কথায় সম্মতি দিল।
রাজ যেতে না চাইলেও তারা জোর করে নিয়ে গেল।
বাসার সামনে যাওয়ার পর রাজ মেয়েটিকে বললো স্নিগ্ধার সাথে গিয়ে কথা বলতে,,
কিন্তু স্নিগ্ধা যেন না জানতে পারে রাজের ফিরে আসার কথা।
স্নিগ্ধার কাছ থেকে শুধু জানতে চাইবে কেন ভাইয়াকে স্নিগ্ধা বিয়ে করতেছে।।।।।।।।।।সাথে একটা মোবাইল এ কল রিসিভ করে মেয়েটার সাথে দিয়ে দিল,,,,,,,,
রাজ একটা রেল লাইন ধরে হেটে যাচ্ছে।রাত প্রায় সাড়ে আটটা বাজে,,একটু পর ই একটা ট্রেন আসবে,,,তাই সে রেল লাইন ধরে নির্জন জায়গায় যেতে চাচ্ছে।
ফোন কলের মাধ্যমে স্নিগ্ধা আর ওই মেয়েটির সব কথা শুনতে পেয়েছে রাজ।
স্নিগ্ধা ভাইয়াকে বিয়ে করতে চায় এর পিছনে অনেক গুলা কারন রয়েছে।
সত্যিই মেয়েটা অনেক ভালো।
ভাইয়াকে বিয়ে করলে সে রাজদের বাসায় থাকতে পারবে।যে বাসায় রাজের হাজারো স্মৃতি পড়ে আছে সেখানে স্নিগ্ধা রাজকে খুজে নিবে।
অন্য কাউকে বিয়ে করলে হয়ত রাজের স্মৃতি নিয়ে বাঁচা যেত না।
কিন্তু রাজের ভাই কে করলে সেটা সহজ হবে,তাছাড়া রাজের পরিবারের একজন হওয়ার কথা ছিল স্নিগ্ধা,এর মাধ্যমে স্নিগ্ধা সেটা হতে পারতেছে,,,,রাজকে কথা দিয়েছিল,,তার কিছু হলে যেন রাজের মা বাবাকে দেখে রাখে,রাজের এসব কথা রাখার জন্যই স্নিগ্ধা রাজের ভাইকে বিয়ে করতে রাজি হয়েছে, ,,,,,,,,,,,,
ভাইয়া নাকি আরো আগেই বিয়ের প্রস্তাব দিয়েছিল।কিন্তু স্নিগ্ধা তা মেনে নেয় নি।কারন রাজকে কথা দিয়েছিল দশ বছর পর তারা বিয়ে করবে,,,তাই সে রাজের জন্য ওপেক্ষা করবেই এত দিন।।।।।।।।.........
রাজ তো ভালোবেসে চেয়ে ছিল স্নিগ্ধা যাতে ভালো থাকে ,সারা জীবন সুখে থাকে,,,,
রাজের কাছে স্নিগ্ধা কতটা ভালো থাকবে সেটা বলা যাচ্ছে না।কিন্তু ভাইয়ার কাছে স্নিগ্ধা অনেক ভালো থাকবে,সেটা বুঝাই যাচ্ছে।
কারন যে ভাইয়া স্নিগ্ধাকে পাওয়ার জন্য নিজের আপন ভাইকে দুরে সরিয়ে দিতে পারে,সে কোন দিন স্নিগ্ধাকে কস্ট দিতে পারবে না,,,তাই ভাইয়ার কাছেই স্নিগ্ধা অনেক সুখে থাকবে।তার চেয়ে বরং যে সবার কাছে হারানো বা মৃত ছিল সে হারানোই থাক না,,তার আর ফিরে এসে লাভ কি হবে?
সবাই তো তাকে ছাড়াই ভালোই আছে, ,,এবং সারা জীবন ভালো থাকবেও
একটু আগেই একটা মেয়েকে যেটা করা থেকে ফিরিয়ে আনলো, ,রাজ নিজেই এখন সেটা করতে যাচ্ছে,এই কাজটা করার জন্য অনেক সাহসের প্রয়োজন হয়,,হয়ত মেয়েটার এত সাহস ছিল না,কিন্তু রাজের অনেক সাহস আছে,,,,সে পারবেই,,,,,,,,,,,,
ধীরে ধীরে রাজ নির্জন এলাকায় প্রবেশ করতে লাগলো, চারি দিকে কেমন শীতল হাওয়া বইতে লাগলো,,,সব কিছু অনেক নিরব হয়ে আসছে,,,সামনে থেকে একটা ট্রেনের হুইসেল আসতে লাগলো,,বুকের হার্ট বিট ধুপ ধুপ করে বারি দিতে লাগলো....

No comments

Powered by Blogger.